বণিক সভ্যতা
বুভুক্ষু এ সভ্যতা রক্ত-মাংস-হাড় চায়, মানুষের।
শান্তির ন্যাকামোতে 'ভুষাখুলি' ঠ্যাঙ্গানো তাই,
উন্নতির সৌধ রচে স্কেলেটন, মানুষের।
আর মানুষ?
“নিতম্ব উলঙ্গ করিয়া সভ্যতার নির্মাতারে ডেকে কহে,
মোর মনিব, লও শাবল-কাস্তে, ঠ্যাঙ্গাও মোরে;
রক্ত-মাংস লও, লও হাড়সব,
তবু রচো সৌধ তোমার, যাহা মন চায়।”
নিতম্বে জোরসে লাথি, হাড় ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ।
বললে আশায়, “দিও শুধু ঠায়,
সৌধের এক কোণে বাচিবার চাই, করো আশা পূর্ণ।”
অর্ধমানব তবু গেলে গীত, “ঠিক, তুমি ঠিক!”
স্কেলেটন কলে গলে হলো সভ্যতার কংক্রিট, মানুষের।
হায়, অর্ধমানুষ হায়!
নত হয়ে র'লে এককোণে বণিক সৌধের!
জোর নেই উঠবার,
দূর থেকে দেখা মেলে শুধু সৌধের শৌর্য
আর কে তুমি মানুষ, কেনো এতো চিৎকার?
কোথা পেলে এতো ধৈর্য্য?
হায় রে বোকা, স্বার্থপর তোর ভণিতা!
জানিস নে, মানুষের তরে সভ্যতা?
কংক্রিটের দেয়ালে লেপ্টে থাকা রক্ত
কতটুকু এনে দিলে সুখ?
জোর-করায়ত্ত কতটুকু ভূমি বলো ঘুঁচিয়েছে দুখ?
কতটুকু পেলে ঐ সৌধে ঠাঁয়
তুমি দাস বণিক সভ্যতার,
হায়, অর্ধমানুষ হায়!
কবিতার মূলভাব: সাম্রাজ্যবাদ ও যুদ্ধভিত্তিক অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার জন্য এই সভ্যতার ধারক-বাহকেরা অগণিত মানুষকে প্রতিনিয়ত অন্যায়ভাবে হত্যা করছে, যুদ্ধ টিকিয়ে রেখেছে। সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য রয়েছে সজ্জিত অত্যাধুনিক সেনাবহর। এই সেনাসদস্যদের বিভিন্নভাবে অনুপ্রাণিত করা হয়। উজ্জীবিত হয়ে এরাই আবার মানুষ হত্যা করে। তারা বিশ্বাস করে, তাদের এই কর্ম - ত্যাগ হয়তো সভ্যতা মনে রাখবে। কিন্তু সত্য হলো, এই সভ্যতা একটা দানবের ন্যায়, যে তার নিজের প্রতিপত্তি-ক্ষমতাকেই প্রাধান্য দেয় সবকিছুর ঊর্ধ্বে; মানুষ তার কাছে নস্যি! অবুঝ মানুষ তবু বুঝে না। এই মানুষদের তাই 'অর্ধমানুষ' বলা হয়েছে।
©ইলিয়াস আহমেদ